|
কলারোয়ায় রোরো ধান সংগ্রহ অভিযান ...ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি
আজকের কলারোয়া -
05/06/2023
> সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্নের অভিযোগ
> পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দূর্নিতী ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা
> প্রধান ফটকসহ খাদ্য গুদামের সামনে লাগানো সিসিাটাভি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা
> যশোর জেলার খাজুরায় দায়ীত্বে থাকাকালীন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালিত ‘তালাশ ’ এর অনুসন্ধানে দূর্নিতী ও অনিয়মের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ
> অবিলম্বে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা
------------------------------------------------------------------------------------
কলারোয়ায় সরকারি বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নিতীসহ কৃষক হয়রানীর অভিযোগে জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ’ কলারোয়া ডট কম' এ ‘কৃষকরা নেই ‘কৃষকের অ্যাপে’, নিয়ন্ত্রণ ফড়িয়াদের হাতে!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা খুশি হলেও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তা রহস্যজনক নিরবতায় হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। এমনকি ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনের বেপরোয়া উৎকোচ আদায় এবং সিন্ডিকেটের নিকট থেকে ধান ক্রয় ও সখ্যতা অব্যাহত থাকায় খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার প্রান্তি কৃষকেরা।
খোঁজনিয়ে জানাগেছে, ধান সংগ্রহে কৃষক হয়রানী এবং মধ্যস্বত্বভোগী ও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের নিকট থেকে ধান ক্রয়সহ আর্থিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত ২/৩টি প্রত্রিকায় উক্ত সংবাদটি মিথ্যা দাবি করে বিজ্ঞাপন দেন এবং নিজেকে নির্দেষ দাবি করেন। তবে, এঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজসহ কৃষক প্রতিনিধিরা। উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, উক্ত ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোটা অংকের অর্থ নিয়ে সিন্ডিকেটের নিকট থেকে বোরো ধান ক্রয় ও প্রান্তিক কৃষকদের হয়রানী করে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে। তারা দুর্নিতীবাজ গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনকে অবিলম্বে প্রত্যাহারসহ জড়িত সকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করে দ্রত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সাথে তারা জানান, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনকে প্রত্যাহার না করা হলে প্রয়োজনে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুদাম সংলগ্ন একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন সন্ডিকেটের সদস্য ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে পারামর্শ করে বিষয়টি ধামাচামা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এছাড়া নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার জন্য কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ দাবি করে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। তারা আরও বলেন, খাদ্য গুদামের নিরাপত্তার জন্য সরাকরি টাকায় গুদামের চারিপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে কিন্তু সুচতুর ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা কৌশলে খাদ্য গুদামের প্রধান ফটক, গুদামের সামনে লাগানো সিসিাটাভ ক্যামেরার তাঁর খুলে রেখেছেন। যেন দুর্ণীতি বা অনিয়মের কোন তথ্য কেউ সংগ্রহ করতে না পারে। তবে, শুধুমাত্র নিজ অফিস রুমের সিসিটিভি ক্যামেরা চালু আছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা অবিলম্বে গুদামের সকল সিসিটিভি ক্যামেরা সচল করা এবং কৃষকবান্ধব গুদাম তৈরির দাবি জানান।
এদিকে তথ্য অনুসন্ধানে জানাগেছে, এরআগে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন যশোর জেলার খাজুরায় দায়ীত্বে থাকাকালীন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে পরিচালিত দূর্নিতী বিরোধী অনুসন্ধানী দল ‘তালাশ টিম’ সরজমিনে উক্ত কর্মকর্তার দূর্নিতী ও অনিয়মের অনুসন্ধান চালিয়ে সত্যতা পান এবং ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একইসাথে স্থানীয় কৃষকদের আন্দোলনের মুখে উক্ত কর্মকর্তাকে খাজুরা থেকে প্রত্যাহার করেন খাদ্য বিভাগ। বর্তমানে মমতাজ পারভীন কলারোয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়ীত্ব পেয়ে বহাল তবিয়তে আর্থিক দূর্নিতী ও অনিয়ম, কৃষক হয়রানীসহ নান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উৎকোচ গ্রহন ও কৃষক হয়রানীর বিষয়ে জানতে কলারোয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মমতাজ পারভীন সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন। এছাড়া এবিষয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি অফিসের বাইরে আছেন বলে জানিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
প্রসংগত; কলারোয়ায় চলতি বছর বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানে মধ্যস্বত্বভোগী ও ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার যোগসাজশে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ধান বিক্রি করতে পারছে না প্রান্তিক কৃষকরা। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্যমূল্য থেকে।
প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ করেন, খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করলে প্রতি বস্তায় (৪০ কেজি) ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত গ্রদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনকে। এছাড়া রয়েছে স্থানীয় গুদাম সিন্ডিকেটের নানা হুমকি। কৃষকের ধানে মানতে হচ্ছে ১৪ ভাগ আর্দ্রতা নিরূপণের শর্তসহ নানা রকম হয়রানি। তবে, ফাড়িয়াদের নিকট থেকে ধান ক্রয়ে নেই কোন ঝামেলা। দেখা হচ্ছে না ধানের আর্দ্রতা। অতি সহজে নিন্ম মানের ধান গুদামে ক্রয় করা হচ্ছে। গুদাম কর্মকর্তা এসব ফাড়িয়াদের নিকট থেকে বস্তা প্রতি (৪০ কেজি) ৫০ থেকে ৬০ টাকা উৎকোচ নিয়ে অতি নিন্ম মানের ধান ক্রয় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তারা অভিযোগ তুলে আরও বলেন, উপজেলায় প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সরকারিভাবে ধান বিক্রির বিষয়ে কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি। পরিচিত ও সিন্ডিকেটভুক্ত কৃষকদের মাধ্যমে ‘কৃষকের অ্যাপে’ আবেদন করে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। ধান ক্রয়ে দুর্ণিতী, কৃষক হয়রানী বন্ধ ও উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের রক্ষায় অবিলম্বে দুর্নিতীবাজ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান ও সিন্ডিকেট প্রধান ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনকে অপসারনের দাবি জানান। একই সাথে গুদামের দুর্নিতী তদন্তে দুর্নিতী দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে, সরজমিনে কলারোয়া উপজেলা খাদ্য গুদাম ঘুরে কৃষকের দেখা না পেলেও উপস্থিতি ছিলো একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য। ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীনের উপস্থিতিতে খাদ্য বিভাগের নিজস্ব বস্তায় ট্রলি ভর্তি ধান প্রবেশ করছে। রাখা হচ্ছে গুদামের বিভিন্ন স্থানে সারিবদ্ধ ভাবে। পরে ক্রয় দেখিয়ে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে। তবে, সরবরাহকৃত ধানগুলি সিন্ডিকেটের হওয়ায় দেখা হচ্ছে না ধানের আদ্রতা। এছাড়া চিটাসহ নিন্ম মানের ধান ক্রয় করা হচ্ছে। গুদামের প্রধান ফটক বন্ধ রেখে ভিতরে অবস্থান করছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। প্রান্তিক কৃষক ধান বিক্রির জন্য গুদামে প্রবেশ করলে বলা হচ্ছে পূর্বে আবেদন করা না থাকলে ধান ক্রয় করা সম্ভব নয়। যদিও উপজেলা কুষি জানায়, আ্যাপের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে পাঠানো (ধান বিক্রির জন্য) আবেদকৃত কৃষকের তালিকা দেখাতে পারেনি ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা! একদিন আগে গুদামে ক্রয় করা নিন্ম মানের ধানের নমুনা (সংগ্রহ করা) দেখিয়ে ধানের আদ্রতা ও চিটার বিষয়ে দেখালে ক্ষুদ্ধ হন ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা মমতাজ পারভীন। তিনি বলেন, পূর্বে যেসব ধান ক্রয় করে গুদামে রাখা হয়েছে সেগুলি এখন দেখিয়ে কি হবে ?
কেড়াগাছি ইউনিয়নের আব্দুল খালেক নামে এক কৃষক বলেন, কৃষকের ধান কিনলে অফিসারের বেশি লাভ হয় না, সেজন্য ফাড়িয়াদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিন্ম মানের ধান ক্রয় করছে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এক পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে আবেদন করছে, তারা সবাই ধান বিক্রি করছে, এদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ীও রয়েছে। এখন দেখছি ব্যবসায়ীরাও কৃষক হয়ে গেছে! একই এলাকার কৃষক কুদ্দুস গাজী বলেন, ‘কৃষক না, নিজের জমি নাই, এমন লোকও কৃষকের অ্যাপে আবেদন করছে। আবার নিজের আবাদ নাই, আরেক মিলার বা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সিন্ডিকেট করে ধান এনে বিক্রি করছে কেউ কেউ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে গোডাউনে (খাদ্য গুদাম) কার্ড দিয়া ধান বিক্রি করা যেত, এখন মোবাইলে আবেদন করতে হবে। তবে, এই বিষয়টা সবাই জানেই না। গোডাউনের কোনো লোক আসে নাই, কৃষি অফিসেরও কোনো লোক আসে নাই। আমরা জানবো কেমন করে।’
হেলাতলা ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল জানান, ‘ধান বিক্রির জন্য আবেদন করে লাভ কি ? ধান নিয়ে গেলেই অফিসার বলতে শুরু করে ধানে চিটা আছে, ধানের সাইজ ঠিক নাই। অথচ টাকা দিলেই স্যার (ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্ত মমতাজ পারভীন) এই ধান নিয়ে আর কথা বলে না। একই অভিযোগ করে কৃষক রশিদ বলেন, ধান বিক্রি করতে গেলে কত নিয়মের কথা যে শোনায়! আবার খাদ্য গুদামের অফিসারকে খরচাপাতি দিলেই (৪০ কেজি ধানে ৫০ টাকা) ধান নিয়ে আর কথা বলে না। গুদামে কিনে নেয়।’
|