|
কলারোয়ায় নিষিদ্ধ গাইড প্রকাশনীর প্রশ্নে পরীক্ষা শুরু হয়ে এক দিন পর বন্ধ
আজকের কলারোয়া -
13/08/2016
কলারোয়ায় অনিয়মের মাধ্যমে ম্যাধমিক স্তরে শুরু হওয়া পরীক্ষা এক দিন পর বন্ধ হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিসহ সদস্যরা। চুক্তি ভিত্তিক প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা নেয়ার নাটের গুরু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কয়েকটি স্কুলের ক্ষমতাশীন দল সমর্থিত প্রধান শিক্ষক এ ঘটনার পর উপজেলার কয়েকজন সাংবাদিকদের এ বিষয়ে কোন সংবাদ না করার জন্য নানা ভাবে হুমকি প্রদান করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে গাইড কোম্পানির সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়ে একই প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন সূচীতে উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে পরীক্ষা গ্রহন ও প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে বিদ্যালয়ের অবিভাবকসহ এরাকার সচেতন মহল। তারা অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, কলারোয়া জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল ও কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকরা ক্ষমতাশীন দল সমর্থিত ও আ.লীগের পদধারী নেতা হওয়ায় তাদের ক্ষমতার প্রভাবে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাদের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ধংস ও কোচিং বানিজ্য বৃদ্ধি করাসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারছেনা। অনেক শিক্ষক চাকরির ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে মুখ খুলতে পারছেনা বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্কুল শিক্ষক। উপজেলার সিন্ডিকেট পরিচালিত এসব বিদ্যালয়ের অবিভাবকরা অবিলম্বে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ, কলারোয়া পৌর সদরের জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল এর প্রধান শিক্ষক প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা আব্দুর রব ও কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উপজেলা আ.লীগ নেতা বরুজ্জামান বিপ্লবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং কলারোয়া উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে বানিজ্যকরনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রীসহ সংশিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে তারা সরকারের শিক্ষা নীতির নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের মেধা ধংসের হাত রক্ষা করার দাবি করেছেন। অবিভাকরা জানান, এ ঘটনার জন্য দায়ী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে দূর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অবিভাবকরা উপজেলার সচেতন মহলকে সাথে নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা জানান, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রলায়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কলারোয়া উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও কলারোয়া পৌর সদরের জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল, কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলসহ উপজেলার ১০/১২টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যম্যে নিষিদ্ধ গাইড কোম্পনির তৈরী করা প্রশ্নে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছে। একই প্রশ্নে কলারোয়া পৌর সদরসহ কয়েকটি স্কুলে ভিন্ন সূচীতে পরীক্ষা নেয়ায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এ সব বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। গতকাল এ ঘটনা জানাজানি হলে কলারোয়া জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল ও কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের পরীক্ষা স্তগিত ঘোষনা করেছে।
প্রসংগত ; কলারোয়া জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল ও কলারোয়া গার্লস হাইস্কুলসহ উপজেলার কয়েকটি স্কুল অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা শিক্ষা মন্ত্রলায়ের কোন নিয়ম নীতির তোয়ক্কা না করে নিষিদ্ধ গাইড কোম্পানির সাথে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে তৈরী প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। তারা বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষার সময় সূচী ভিন্ন ভিন্ন সময় দিয়ে সকল শ্রেনীর পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের বিশেষ ব্যবস্থা করার ঘটনাটি অবিভাবকদের মাঝে জানাজানি হলে অবশেষে কলারোয়া পৌর সদরের ঐতিহ্যবাহি কলারোয়া জিকেএমকে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের পরীক্ষা স্কুল প্রধানরা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলাকালীন স্তগিত ঘোষনা করেন। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃস্টি হয়। এ ঘটনার পরে কলারোয়া জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুলের একাধিক অবিভাবক অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানানোর পর এই দুই বিদ্যালয় তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর কিছু সময়ের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত করে।
তারা আরো জানান, শিক্ষা মন্ত্রলায়ের নির্দেশে দেশ ব্যাপী জুলাই ১২ তারিখ থেকে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলসহ উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে জুলাই ১১ তারিখ থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময় সূচী ঘোষনা করে। এর ফলে সিন্ডিকেট পরিচালিত বিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচীর মধ্যে মিল না থাকায় নির্ধারিত পরীক্ষার দুই দিন আগেই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সে সব বিষয়ের প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। এর ফলে চরম বিপাকে পড়েছে এ সব বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এসব বিদ্যালয়ের অবিভাবকরা আরো জানান, কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই প্রভাবশালী প্রধান শিক্ষকরা সন্ডিকেটের মাধ্যম্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে একেক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার সূচী ভিন্ন ভিন্ন তারিখে নির্ধারন করে বিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ তৈরী করে দিয়েছেন। এর ফলে কোচিং করা শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ করে জানান, অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষায় কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলে জুলাই ১১ তারিখে ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয় অথচ জুলাই ১৩ তারিখে একই প্রশ্নে কলারোয়া জিকেএমকে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজী প্রথম পত্র পরীক্ষা চলাকালে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্কুল কতৃপক্ষ ঘটনাটি আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষনা করেন।
উপজেলার এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের বাইরে থাকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মোটা অকের টাকার বিনিময়ে সরকারের নিয়ম ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে ফাঁসকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া এবং স্কুলে কোচিং ব্যবসা করে উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা শুন্য করে দিচ্ছে অপরদিকে অবিভাবকরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
এ বিষয়ে কলারোয়া খোর্দ্দ বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল হোসেন জানান, স্কুলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য প্রশ্ন করা অনেক ব্যায় বহুল সে জন্য উপজেলার কয়েকটি স্কুল মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কলারোয়া গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বদরুজ্জামান বিপ্লবের কাছে পরীক্ষা স্থগিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলারোয়া জিকেএমকে মডেল পাইলট হাইস্কুল এর প্রধান শিক্ষক আব্দুর রব জানান, প্রেসের ভুলের কারনে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা জানার পরও কেন সে বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছিল সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমরা নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলাম। তবে এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের পত্রিকায় কিছু না লেখার অনুরোধ করেন এবং চা-মিষ্টি খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু ব্যাক্তি আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এ সব ষড়যন্ত্র করছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের ভালো ফলাফলের স্বার্থে কিছু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা আমার সাথে পরামর্শ করে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে। এর বেশী তিনি সাংবাদিকদের কাছে তিনি আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি আমি অবহিত হয়েছি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার সাথে কোন প্রকার বানিজ্যকরণ তিনি হতে দেবেন না। এবং এ বিষয়ে তিনি দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
|