Home
 
কলারোয়ায় মাদ্রাসার সহ-সুপার পদের দাম ১১ লাখ টাকা
সাজানো বোর্ডে নিয়োগ পেলেন আতাউল রহমান

আজকের কলারোয়া - 16/08/2016
কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া মাদ্রাসার সহ-সুপারেনটেন্ড পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দূনীতির অভিযোগ উঠেছে। নিয়োগ কমিটি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল নিয়ম ভঙ্গ করে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে একই উপজেলার আতাউল রহমানকে গোপনে বোর্ড করে সহ- সুপারিনটেন্ড নিয়োগ দিয়েছে পরিচালনা কমিটি। এ ঘটনা নিয়ে ঐ পদে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদনকৃত কয়েকজন যোগ্য শিক্ষকরা একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করলেও তিনি এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে তাদের অভিযোগ। মাদ্রাসার সহ শিক্ষকরা জানান, দেয়াড়া মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ড হযরত আলী ক্ষমতাশীন দল আ.লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তিনি নিজের ইচ্ছামত কাজ করেন। মাদ্রাসার কোন বিষয়ে তিনি শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করেন না। মাদ্রাসায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে। জানা গেছে গত ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর মাদ্রাসায় সহ: সুপারের পদে চাকুরী করাকালীন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ক্ষমতাশীন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা, মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক দালালসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে ম্যানেজ করে মাদ্রাসার সুপারেনটেন্ড পদে নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর মাদ্রাসা সুপারেনটেন্ড হযরত আলী কৌশলে গত ১ ফেব্ররুয়ারী সহ- সুপারেনটেন্ড পদে নিয়োগের জন্য সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক কাফেলা’ পত্রিকায় ছোট একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আবেদন করলেও তিনি নিয়োগ বোর্ড না করে সাদ্রাসার সহ-সুপারেনটেন্ড পদে নিয়োগ দেখিয়ে সরকারের বেতনের অংশ গোপনে ব্যাংক থেকে তুলে হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আবেদনকারীদের চাপে সুপারেনটেন্ড উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে গত ২৮ জুলাই, ২০১৬ তারিখে গোপন নিয়োগ বোর্ড গঠন করে। কিন্তু যোগ্য প্রার্থীদের আবেদন পত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। পরে উপজেলার বেড় বাড়ী মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী এবং তার সহযোগি আতাউল রহমানকে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে সহ সুপারিনটেন্ড পদে নিয়োগ দেয়া হয়। দূর্নীতিবাজ সুপার নিয়াগ দেয়ার নামে আবেদনকৃত প্রার্থীদের মধ্যে আরও এক জনের নিকট থেকে দুই লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে আতœসাত করেছে। খোজ নিয়ে জানাগেছে, কলারোয়া দেয়াড়া মাদ্রাসার সহ সুপার পদে আবেদনকৃত উপজেলার বেড় বাড়ী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী আসাদুজ্জামান, সোনাবাড়ীয়া মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী আকছেদ আলী, রাজনগর মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী নজরুল ইসলাম, কলারোয়া আলীয় মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী শফিউল আজমসহ আরো কয়েক জন যোগ্য প্রার্থী উক্ত পদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নিয়োগের সকল শর্ত মেনে আবেদন করলেও মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ড ও পরিচালনা কমিটি তাদের আবেদন পত্র বাতিল করে দেন। এই পদের জন্য তিনি আবেদন করা আরো এক প্রার্থীর নিকট থেকে দুই লাখ টাকা গ্রহন করেছেন কিন্তু তাকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অথচ আতাউল রহমানকে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে সহ সুপারিনটেন্ড পদে নিয়োগ দিয়েছেন মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ড তবে এ ঘটনার সাথে কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ক্ষমতাশীন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা জড়িত বলে চাকরি বঞ্চিতদের দাবি। এ দিকে আবেদনকৃত কলারোয়া আলীয় মাদ্রাসার সহকারী মৌলোভী শফিউল আজমসহ কয়েকজন প্রার্থী জানান, মাদ্রাসায় নিয়োগের জন্য পত্রিকায় দেয়া বিজ্ঞপ্তির সকল শর্ত মেনে আমরা আবেদন করলেও কোন কারন ছাড়াই আমাদের আবেদন বাতিল করা হয়। সহকারী মৌলোভী শফিউল আজম বলেন, দূর্নীতিবাজ মাদ্রাসা সুপারেনটেন্ড আমাকে ডেকে বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের চা-মিষ্টি খাওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা দিলে তিনি তাকে নিয়োগের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেন, এ সময় আমি সরল মনে মাদ্রাসা সুপারেনটেন্ড এর কথা বিশ্বাস করি এবং বোর্ডের সদস্যদের কথা চিন্তা করে মাদ্রাসা সুপারেনটেন্ড এর নিকট নগদ দুই লাখ টাকা প্রদান করি। তিনি আরো বলেন, পরে দূর্নীতিবাজ সুপার আমার আবেদন পত্র বাতিল করে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে গোপন বোর্ড বসিয়ে আতাউল রহমানকে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন আমার টাকা ফেরত চাইলে তিনি ভিভিন্ন ভাবে আমাকে হয়রানী করছে। তিনি তার টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন। তারা আরো জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত আতাউল রহমান পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যহতি না নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন। যা সম্পূর্ন নিয়ম বর্হিভূত। তারা প্রশ্ন করে বলেন, একজন শিক্ষক দুই প্রতিষ্ঠানে কি ভাবে চাকরী করে ? এ বিষয়ে দেয়াড়া মাদ্রাসার সুপার মাওলানা হযরত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গোপন বোর্ড বসানো এবং ১১ লাখ টাকা গ্রহন করার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, বোর্ডের সদস্যদের খুশি করা একটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। এটা সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে আসছে। এখন এটা অনেকটা জায়েজ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফজলুল হক দালাল জানান, সাংবাদিকরা শিক্ষা অধিদপ্তরে যোগাযোগ করে খোজ খবর নিয়ে আসুক। তার পর মুখ খুলবো। কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ জানান, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে এ ধরনের দূর্নীতির বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে নিয়োগ বাতিল করা হবে। উল্লেখ্য ; মাদ্রাসা সুপারিনটেন্ড মাওলানা হযরত আলী এর আগে সহ সুপারিনটেন্ড থাকাকালীন শুন্য পদে শিক্ষক দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করে মোট অংকের টাকা চুরি করেছিলো। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে উত্তোলনকৃত বেতনের একটা অংশ প্রদান করে মাসের পর মাস চোর্যবৃত্তি করে আসছিলেন। পরে সাংবাদিকরা লেখা লেখি করলে তিনি অন্যের বেতনের অংশ চুরিতে ক্ষ্যান্ত দেন। হযরত আলী গত বছরের ১৭ অক্টোবর মাদ্রাসার সহ: সুপারের পদে সভাপতির নিকট লিখিত পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে একই মাদ্রাসার সুপার পদে যোগদান করেন। তিনি যোগদান করার পর থেকে সভাপতিকে ম্যানেজ করে সহ:সুপারের শুন্য পদে সরকারি অংশের বেতনভাতা উত্তোলন করে আতœসাত করেছিলেন। সে সময় উক্ত সুপার বলেছিলেন, আমি তো কারোর ব্যক্তিগত টাকা তুলছিনা। যে পদেই হোক না কেন সরকার (প্রতি মাসে ১৪ হাজার ৫০০) দেয়, আমি খাই। সে সময় তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমি বিক্রির টাকা দিয়ে সুপার পদে চাকরি নিয়েছি। তাই সুযোগ বুঝে পুষিয়ে নিয়েছি।


 



গন্তব্য কলারোয়া    
Product Image Product Image


 
    
Copyright : Kalaroa.com, 2019
Email : info@kalaroa.com