Home
 
সাতক্ষীরায় গ্রামীন হস্তশিল্প ও ঈদ আনন্দ মেলায়
চলছে নগ্ন নৃত্য, লটারী ও হাউজি

আজকের কলারোয়া - 26/10/2016
সাতক্ষীরা রাজারবাগানে সরকারি কলেজ মাঠে গ্রামীন হস্তশিল্প ও ঈদ আনন্দ মেলার নামে রক্তচোষা সবুজ বাংলা লটারী ও হাউজি খেলার নামে চলছে ভিআইপি জুয়া।জেলার সর্বত্র পিকআপ ভ্যানে সবুজ বাংলা লটারীর চটকদারি প্রচারণায় ভাগ্য পরিবর্তনের নামে টিকিট কিনে নিঃস্ব হচ্ছেন জেলার গরীব কৃষক, শ্রমিক, মজুর, ছাত্র ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। আবার নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরাও পুরুস্কারের লোভে ২০ টাকা মূল্যের এ লটারী কিনেই চলেছেন। কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তন না হয়ে বরং নিঃস্ব হয়ে সংসার বা পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। মেলায় বিত্তশালীরা খেলছেন হাউজি খেলা। জেলা প্রশাসনের লটারী খেলার অনুমোতি না থাকলেও জেলা প্রশাসনের নাকে ডগায় এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারনা করলেও নিরব রয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান কলেজ মাঠে ৭ অক্টোবর থেকে গ্রামীন হস্তশিল্প ও ঈদ আনন্দ মেলা শুরু করার জন্য দিন ধার্য করা হয়। সেখানে লটারী, জুয়া ও পুতুল নাচসহ নয়টি বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে মেলা চালানোর অনুমোতি পান সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদ। সে হিসেবে ১৪ অক্টোবর থেকে মাসব্যাপি এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা- ২ আসনের সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি। মঙ্গলবার সরেজমিনে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ মাঠ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে তিনটি পোশাকের স্টল ছাড়া হস্তশিল্পের কোন স্টলই নেই মেলায়। মাঠে রয়েছে বেশ কিছু চায়ের স্টল ও খাবরের দোকান। এছাড়া ৫০, ৮০ ও ১২০ টাকার টিকিটে বিকেল তিন টা ও ছয় টা পর্যন্ত সার্কাসের দু’টি শো চলছে। সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে সাতক্ষীরা জেলা শহরসহ জেলার সাত টি উপজেলার উদ্দেশ্যে আট টি পিকআপ ভ্যান প্রচার মাইক নিয়ে ২০ টাকার লটারী টিকিট বিক্রির উদ্দেশ্যে চটকদারি প্রচারণা করতে করতে সরকারি কলেজ এলাকা থেকে বেরিয়ে পড়ছে। এ ছাড়া শহর ও শহরতলী ছাড়াও সদর উপজেলা জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে লটারী টিকিট বিক্রির দেড় শতাধিক মোটর চালিত ভ্যান। এসব প্রচারণা চলছে প্রশাসনের সামনেই। রাত ১০টার আগেই বিক্রি হওয়া লটারীর ১২৫ টির বেশি কুফন বক্স নিয়ে ফিরে আসার পর শুরু হচ্ছে খেলা। আবার প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মীরাও অনেকে লটারীর টিকিট কিনে খেলা উপভোগ করছেন। একইভাবে এক এক দিনে হাউজি’র শিট কিনতে হচ্ছে এক এক দামে। সন্ধ্যা থেকে এ খেলা শুরু হলে ২৫ টাকায় শিট কেনার সূযোগ থাকলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে বোনাসের টাকা বেশি ঘোষনা দিয়ে শিটের দাম ৫০ থেকে ১’শ টাকা করা হচ্ছে। আগামি শুক্রবার ছুটির দিনে শিটের দাম ২০০ টাকা দরে ধার্য করে বোনাস দু’ লাখ টাকা পুরুস্কার ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যাদু খেলা দেখানোর নামে ৩০ টাকার টিকিটে পুরাতন সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত আকবর আলী উঠতি বয়সের নারীদের নিয়ে অর্ধনগ্ন পোশাক পরিয়ে একটি শো'তে সাত থেকে আটটি নাচ-গান শোনাচ্ছেন। মেলা শুরুর প্রথম থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চললেও দিন রাত উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর কারনে শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেননি। ঘুরে আরো দেখাগেছে, মেলার নামে যুব সমাজ ও মাদকাসক্তরাও ভিড় জমাচ্ছেন লটারী, হাউজি ও যাদুর নামে অর্ধনগ্ন নৃত্য দেখতে। স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসী জানায়, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষকে এককালিন পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে এবং মাঠের উন্নয়নকল্পে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে মেলা বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। মেলায় হাউজি, পুতুল নাচ ও লটারী খেলার সরকারি অনুমোদন না পাওয়ায় মেলা চালানোর সুবিধার্থে এক জনপ্রতিনিধিকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছে বলে তারা জানানা। এ ছাড়া ওই জনপ্রতিনিধির নিকট আত্মীয় ও কাছের লোক বলে পরিচিতদের প্রতিদিন উৎকোচ ছাড়াও হাউজি শিট বিনা পয়সায় দিতে হয়। সব ধরনের প্রশাসনকে পৃথক পৃথক ভাবে ম্যানেজ করতে হয় মোটা অংকের টাকায়। জুয়া ও লটারীর খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ না করার জন্য সাতক্ষীরায় কর্মরত সাংবাদিকদের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের বাইরের সাংবাদিকদেরও এক কালিন দু’ থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আয়োজক কমিটি বিভিন্ন ভাবে ম্যানেজ করে চলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী ও সমর্থকদের। মেলা শুরুর প্রথম দিকে সবুজ বাংলা লটারী টিকিট ভালভাবে বিক্রি না হওয়ায় মালিক আজিজ আহম্মেদ সোহেল গত ২৩ অক্টোবর থেকে ২৫ শতাংশ ভাগীদার হিসেবে যুক্ত করেছেন যশোরের সেই বহুল আলোচিত উল¬াস লটারীর মালিক সৈকতকে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৮০ হাজার থেকে এক লাখেরও বেশি লটারী টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সকলকে ম্যানেজ করে লটারীর ৪ জন অংশীদার প্রতিদিন গড়ে আয় করছেন পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। এ ছাড়া হাউজি মালিক প্রতিদিন লুটে নিচ্ছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে শুক্রবার থেকে এর পরিমান দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে। এ ছাড়া যাদু খেলার নামে অর্ধনগ্ন নারীদের দিয়ে নাচ গান পরিবেশন করিয়ে লুট করা হচ্ছে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিশিষ্ঠ আইনজীবী এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, শিক্ষক স্বপন কুমার শীল, সমাজসেবক গোষ্ট বিহারী মন্ডল, কলেজ ছাত্র দেবাশীষ মন্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রশাসনের অনুমতি না থাকা সত্তেও জেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় আয়োজক কমিটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যেভাবে রক্তচোষা হাউজি ও লটারী চালাচ্ছে তা সাতক্ষীরা জেলাবাসীকে নিঃস্ব করে ফেলছে। তারা প্রশ্ন করে বলেন, এটাই কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ ! স্থানীয়রা আরো জানান, গত দু’ বছরে উল¬াস লটারীর মালিক যশোরের সৈকত সাতক্ষীরা সরকারি বালক বিদ্যালয় ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে লটারীরর নামে মানুষজনকে নিঃস্ব করেছেন। পরে জনগণের বাধার মুখে মেলা শেষ হওয়ার আগেই তারা লটারী বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। তাই জেলা প্রশাসকের উচিত এ কাজ আজই বন্ধ করে দেওয়া। এ মেলার ফলে গুড়পুকুরের মূল মেলা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কলে দাবি করেন তারা। এ বিষয়ে সবুজ বাংলা লটারীরর প্রধান পরিচালক আজিজ আহম্মেদ সোহেলের সাথে তার সেল ফোন নং-০১৬১১৩১৭৭৪৫ গতকাল বুধবার দুপুর এক টায় কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। একইভাবে তার সহযোগী সোহাগের সঙ্গে ০১৭১২-২০৩০৫২ নম্বর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকেও পাওয়া যায়নি। তবে অপর অংশীদার উল¬াস লটারীর স্বত্বাধিকারী সৈকত হোসেন জানান, তিনি অতিথি হিসেবে এখানে এসেছেন। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেনা বলে দাবি করেন। লটারী খেলার সরকারি অনুমোদন আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনার রিপোর্ট করার প্রয়োজন নেই, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। যাদুর নামে নগ্ন নৃত্য পরিবেশনকারি আকবর হোসেন বলেন, এটা এমন কিঠুই অশালীন নয়, যা’ পরিবেশ নষ্ট করে। এছাড়া দর্শকদের আনান্দ দিতে মাঝে মাঝে একটু গানের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লিয়াকত পারভেজ জানান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে মাঠ ব্যবহারের জন্য এক মাসের লিখিত অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, তারা মাঠ ও কলেজের উন্নয়নে কিছু টাকা দেওয়ার চুক্তিতে মাঠ ব্যবহার করছে। সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মশিয়ার রহমান মশু জানান, মেলা চালানোর ব্যাপারে অনুমতি পাওয়ার পর নিয়ম নীতি মেনে কাজ করার জন্য তিনি সবুজ বাংলা লটারীর পরিচালক আজিজ আহম্মেদ সোহেল, সোহাগ, উল¬াস লটারীর পরিচালক সৈকত হোসেনসহ কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা কোন অনিয়ম করে থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। এ বিষয়ে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, এ সব মেলার অনুমতি জেলা প্রশাসক মহোদয় দিয়ে থাকেন। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলায় লটারী ও হাউজিসহ নয়টি বিষয়ের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করা আছে। এরপরও লটারী, হাউজি ও পুতুল নাচ চললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাংসদের পক্ষ থেকে তাদের তিনতলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার লক্ষ্যে এক মাস মেলার চালানোর অনুমতি চান। সে অনুযায়ি ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ মেলার মেয়াদ থাকছে। তবে মেলায় লটারী, পুতুল নাচ ও হাউজিসহ নয়টি বিষয়ের উপর কোন অনুমতি নেই উলে¬খ করে তিনি বলেন, অনিয়ম হচ্ছে না একথা বলা যাবে না। তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় এত সাংবাদিক থাকার পরও অনিয়ম নিয়ে কোন পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে খবর ছাপা হয়েছে বলে তার জানা নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে তিনি বৃহষ্পতিবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সাতক্ষীরায় ফিরলেই তার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জেলাবাসীকে আসস্ত করেন।


 



গন্তব্য কলারোয়া    
Product Image Product Image


 
    
Copyright : Kalaroa.com, 2019
Email : info@kalaroa.com