|
স্বামীকে পুলিশে দেওয়ার ভয়দেখিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
আজকের কলারোয়া -
18/09/2017
১৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও স্বামীকে পুলিশে দেয়ার ভয় দেখিয়ে এক গৃহবধুকে (১৯) ঘরের মধ্যে আটক রেখে গনধর্ষণ করা হয়েছে। এই অভিযোগে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
ধর্ষিতার মা বাদি হয়ে বৃষ্পতিবার দুপুরে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৭/৯(৩)/৩০ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন। ভারপ্রাপ্ত বিচারক সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মোঃ আশরাফুল ইসলাম মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামীরা হলেন, কলারোয়া উপজেলার পাঁচনল গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক ঢালীর ছেলে যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান (৩৮), একই গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে সোহাগ হোসেন (৩৫), একই উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের জলিল দফাদারের ছেলে সোহাগ দফাদার (২২), যুগিখালি গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে আসাদুল ইসলাম(৩০) ও একই গ্রামের আলী দালালের ছেলে কদম আলী (৩০)।
মামলার বিবরনে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ জুন কলারোয়া উপজেলার যুগিখালি গ্রামের এক দিনমজুরের সঙ্গে বিয়ে হয় বাদিনীর মেয়ের। বিয়ের আগে থেকে ওই দিন মজুর কাজের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিথারী গ্রামে থাকতেন। বিয়ের আগে বাদিনীর জামাতা ভারতে থাকতো এমনটি জানতে পেরে আসামীরা তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতো। আসামী আসাদুল ইসলাম ও কদম আলী গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে বাদিনীর বাড়িতে আসিয়া তার মেয়ে ও জামাতাকে বলে যে তার জামাতা ভারতের লোক। তোদের ধরতে পুলিশ এসেছে। এরপর বাদিনী, তার স্বামী, এক ছেলে ও মেয়ে জামাইকে যুগিখালি বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসের দ্বিতীয় তলায় আনা হয়। সেখানে আগে থেকেই উপ¯ি’ত ছিলেন আসামী চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা রবিউল হাসান ও সোহাগ হোসেনসহ কয়েকজন। একপর্যায়ে আসামী রবিউলসহ অন্যান্য আসামীরা বাদিনী, তার ছেলে ও জামাতাকে গালিগালাজ করতে থাকে। আসামী রবিউল হাসান বাদিনীর মেয়েকে রেখে তার সঙ্গে থাকা সকল লোকজনদের বাড়িতে যেয়ে ১৫ হাজার টাকা আনার জন্য অফিসঘর থেকে বের করে দেন। কিছুক্ষণ পর বাদিনী ও তার স্বজনরা ১৫ হাজার টাকা দিলে আসামী রবিউল হাসান তা পকেটে ভরে থানায় দিতে হবে বলে বাদিনীসহ অন্যদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মেয়েকে (ধর্ষিতাকে) জোরপূর্বক আসামী সোহাগ হোসেনের মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী যেতে চাইলে তাকে মারপিট করার হুমকি দেওয়া হয়। আসামী রবিউল ইসলাম রাত সোয়া ১০টার দিকে বাদিনীর মেয়েকে উপজেলার ঝিকরা গ্রামের জনৈক সঞ্জয়ের বাড়িতে এনে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রবিউল হাসানসহ পাঁচজন তাকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে পালাক্রমে বাদিনীর মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরদিন ফজরের আজানের আগে ¯’ানীয় গ্রাম পুলিশ ইমাদুলকে ডাকিয়া প্রায় অচেতন ধর্ষিতাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সেখান থেকে চলে যায় আসামীরা। গ্রামপুলিশ তাকে ফজরের নামাজের পরপরই ধর্ষিতাকে নিয়ে যেয়ে তার বাড়ির পাশে একটি জায়গায় রেখে চলে আসে।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ধর্ষিতাকে তার স্বজনরা প্রথমে কলারোয়া উপজেলা স্বা¯’্য কমপেক্স ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ১০ সেপ্টেম্বর তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রে ধর্ষণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল হাসান বলেন, চার মাস আগে ভারতীয় এক মেয়েকে নিয়ে তিনি শালিস করেছিলেন। এ ছাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের গ্রুপিং আছে। শত্রুতা রয়েছে জামায়াত শিবিরের লোকজনের সাথেও। শালিসে ক্ষুব্ধ হওয়া একটি গ্রুপ ছাড়াও তার বিরোধী পক্ষের লোকজন এ ধরণের মামলা করাতে পারে। তবে এ ধরনের মামলার খবর তার জানা নেই বলে জানান তিনি।
|