|
দিনমজুর মিনহাজ ৩৫ কোটি টাকার মালিক !অবৈধ মিতা ব্রিকস পরিচালনায় সহযোগিতা কামনা !!
আজকের কলারোয়া -
19/03/2018
কলারোয়ায় উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩ বছর ধরে অবৈধভাবে ভাটায় ইট পোড়ানোর কার্যক্রমের ঘটনায় গত শনিবার (১৭ মার্চ) খবর প্রকাশিত হওয়ার পর গত ২ দিনে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন কোন ভূমিকা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসি। একই সাথে তারা হাজ্বী নাছির উদ্দিন কলেজ সংলগ্ন ফসলি জমিতে নির্মিত মিতা ব্রিকস উচ্ছেদ ও পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে মিনহাজ উদ্দিন গত রোববার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার সুশিল সামাজ ও পরিবেশবাদী সচেতন মহলের প্রতিনিধিরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অবৈধ কাজে গণমাধ্যমকর্মিদের সহযোগিতা কামনা করে সাংবাদিক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। অবিলম্বে তারা অবৈধ ভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সোমবার সরজমিনে উপজেলার ছলিমপুর ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের বিভিন্ন চায়ের দোকানে দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় প্রকাশিত মিতা ব্রিকসের সংবাদ নিয়ে আলোচনা করতে। সংবাদটি প্রকাশে সাধারণ মানুষ খুশি হলেও উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেকে আতংকিত হয়ে পড়েছে এমনটি জানালেন বাজারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি।
কলারোয়া উপজেলা কৃষকলীগের আহবায়ক একই গ্রামের বাসিন্দা মো. আমানুল্লাহ জানান, মিনহাজ উদ্দিন এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতো। ৪ ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। বর্তমানে তার বড় ৩ ভাই ২জন ভ্যান চালিয়ে এবং আরেকজন এলাকায় চাষাবাদ করে জীবন-যাপন করছেন। তিনি জানান, সুচতুর মিনহাজ আদম ব্যবসা ও পরে বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। সে সময় থেকে মিনহাজ উদ্দিন জামাত-শিবিরের অর্থযোগানদাতা হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পায়। বর্তমানে সে ৩০/৩৫ কোটি টাকার মালিক। কৃষকলীগের আহবায়ক জানান, মিনহাজ উদ্দিন ও তার শ্যালক যুবলীগনেতা বাবু হত্যা মামলায় অন্যতম আসামী। এ মামলায় মিনহাজ ৪ মাস হাজতবাসের পর বর্তমানে জামিনে আছেন। এছাড়া মিনহাজের বড় ভাই আছির সরদারের ছেলে শিবির ক্যাডার তৎকালীন সময়ে রিংকু রাস্তায় গাছকেটে নাশকতা মামলার আসামী হওয়ায় শ্যালক আলী হোসেনসহ ২ জনকে নিজ খরচে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেন। বর্তমানে রিংকু সেখানে অবস্থান করলেও শ্যালক আলী হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনেন পরে হত্যা মামলা থেকে জামিন নিয়ে তার ইটভাটা দেখাশোনার দায়িত্বে রেখেছেন। যার কারণে স্থানীয়রা মিনহাজের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না। তিনি আরো জানান, ২০১৫ সালে মিনহাজসহ বহিরাগত জামাত-শিবির ক্যাডাররা আমাকে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের দ্রুত উপস্থিতির কারণে পালিয়ে যায়। এঘটনায় তার বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করা হয়।
ভাই হারা উপজেলা কৃষকলীগ আহবায়ক আমানুল্লাহ আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, চোখের সামনে অনেক রক্ত ঝরতে দেখেছি, নির্যাতন করতে দেখেছি, নিজের ভাইয়ের লাশ কাঁধে নিয়েছি। কিন্তু কোন বিচার আজও দেখতে পাইনি। টাকার কাছে সবাই হার মেনেছে, নীরবতা পালন করছে। তিনি বলেন, যারা সমাজে সত্য ঘটনা তুলে ধরবে আজ এখানে সেসব কলম বন্ধ, আপনারা সাতক্ষীরা থেকে এসেছেন কিছুদিন পর আপনাদের কলমও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমাদের কি অবস্থা হবে? আপনারা একটু লিখুন জামায়াত-শিবির ক্যাডাদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া যুবলীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান বাবুর হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন, রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা, সাংবাদিক ভাইয়েরা নীরব কেন? তিনি জামাতের অর্থদাতা মিনহাজের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ এলাকার পরিবেশ ও ফসলী জমি উদ্ধার করার জন্য কলারোয়া উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
প্রসংগত; কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের ছলিমপুর গ্রামে হাজী নাছির উদ্দীন কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেষে ৪০ বিঘা ফসলী জমি লিজ নিয়ে একই গ্রামের মৃত, ছেপাতউল্লাহ সরদারের ছেলে স্থানীয় প্রভাবশালী মিনহাজ উদ্দীন পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৩ বছর যাবত ‘মিতা ব্রিকস’ নামে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলে উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না এমন দাবি স্থানীয় এলাকাবাসির।
২০১৫ সালে কৃষি জমি লিজ নিয়ে ভাটাটি নির্মাণ করা হয়। ভাটাটির পাশে (প্রায় ২০ গজ) রয়েছে বিশাল আয়তনের কৃষি জমি ও জনবসতি। সরকারের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১কিলোমিটার এর মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ অবৈধ হলেও ভাটাটি কলেজের প্রাচীর ঘেষে (১০ গজ) নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ভাটা নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামুলক হলেও সেটি নেই। ভাটায় অগ্নিসংযোগের আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়ার বাধ্যকতা থাকলেও এ ভাটার কোন অনুমোদন নেই। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দুরুত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হলেও মিতা ব্রিকসটি কলারোয়া-খোরদো সড়কের পাশে (রাস্তা সংলগ্ন) নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ছলিমপুর গ্রামের কৃষকরা জানায়, মোটা অংকের টাকায় লিজ নিয়ে ইটভাটা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এসময় কলেজসহ এলাকার পরিবেশ রক্ষা, ফসলী জমিতে অবৈধ মিতা ব্রিকস নির্মাণ বন্ধের দাবিতে উপজেলা সদরে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, অবিভাবক, স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসী মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। কিন্তু অদৃশ্য কারনে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ হয়নি। পরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে শিক্ষক, অবিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকার কৃষকসহ ৯৯জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করা হয়। এঘটনায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সরজমিনে ঘটনাস্থল তদন্ত করে গত ২০-৮-২০১৫ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তরের সরহারি পরিচালক (প্রচার) মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত মিতা ব্রিকস ইটভাটার মালিক মিনহাজ উদ্দীনকে অবৈধ নির্মাণ করা ভাটা অপসারণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, ইটভাটা অপসারণ না করা হলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরদিকে একই অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও অবৈধ ইটভাটা অপসারণের জন্য কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত নির্দেশনা দেন। এঘটনার পর ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট মিনহাজ উদ্দীন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়ের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অবৈধ নির্মাণ করা ভাটা মিতাব্রিকস অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সরকারের আইন অনুযায়ী ভাটা নির্মাণ করবেন এবং উক্ত ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করা হলো উল্লেখ করে লিখিত মুচলেকা দেন। তারা জানান, লিখিত মুচলেকা প্রদানের দিনও ভাটার কার্যক্রম বন্ধ চলমান ছিলো। স্থানীয়দের দাবি, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে প্রশাসনের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি ভাটার কার্যক্রম তিন বছর যাবত চলমান রেখেছেন।
|