|
কলারোয়ায় প্রধান নিয়োগে ধু¤্রজালপ্রধান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে সহকারি শিক্ষক !
আজকের কলারোয়া -
02/05/2018
কলারোয়ায় ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে গঠিত নিয়োগ বোর্ডকে কেন্দ্র করে ধু¤্রজালের সুষ্ঠি হয়েছে। এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়ীত্বে থাকার কথা জানালেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বা নিয়োগ বোর্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করায় এ ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি নিয়োগ বোর্ডে ইউএনও মহোদয় উপস্থিত থেকেও দায়ীত্ব নেয়ার বিষয়ে অস্বীকার করলে এ নিয়োগ অবৈধ। এর কোন বৈধতা নেই।
গত শনিবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহন শেষে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আব্দুল আজিজ নামের ঘোষনা করা হয়। এর আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুদ্দিন আল মাসুদের বিরুদ্ধে ২২ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে আবেদনকৃত প্রার্থীদের অভিযোগ, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান থাকা এবং নিয়োগ বোর্ডে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: আলাউদ্দীন উপ¯ি'ত থেকে প্রধান শিক্ষক প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহন ও কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপ¯ি'তির ঘটনায় নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এসব প্রার্থীরা। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দূর্নিতীমূক্ত রাখার দাবি জানিয়ে অবিলম্বে এ নিয়োগ বাতিলে দাবি জানান।
প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকৃত আবুল কাশেমসহ কয়েকজন প্রার্থী জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা সামছুদ্দিন আল মাসুদ একাধিক প্রার্থীর নিকট নিয়োগের জন্য ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। অন্যদিকে গোপনে তিনি আব্দুল আজিজ নামে আরেক আবেদনকারীর নিকট থেকে ২০ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে তাকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করেন। এঘটনা জানাজানি হলে উপজেলার খোর্দ্দ-বাটরা গ্রামের মৃত, খোশাল গাজীর ছেলে (প্রধান শিক্ষক পদে প্রার্থী) হাবিবুর রহমান ১৫/০৩/১৮ ইং তারিখে কলারোয়ার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে কমিটির সভাপতি সামসুদ্দিন আল মাসুদ, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী বিকাশ চন্দ্র বৈদ্যসহ ১৮ জনকে বিবাদী একটি মামলা (নং-২৫/১৮) দায়ের করেন। এ মামলার পরবর্তী শুনাণীর দিন ধার্য করা হয়েছে ৭/৫/২০১৮ তারিখে। তারা বলেন, মামলায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী বিকাশ চন্দ্র বৈদ্যকে আসামী করায় তিনি স্বচ্ছভাবে নিয়োগ প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেন। এঘটনায় স্কুলের সভাপতি ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়ে তার অনুগত প্রতাপ কুমার ঘোষকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে একই নিয়োগ দেন। এছাড়া পরিকল্পিতভাবে পরীক্ষার মাত্র দুইদিন আগে প্রবেশপত্র বিতরন করা হয় এবং স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি করা প্রার্থীদের প্রবেশ পত্র দেয়া হয়নি।
খোজনিয়ে জানাগেছে, গত শনিবার (২৮ এপ্রিল) ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বেলা ৩ টা থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষায় অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজসহ মাত্র ৪জন প্রার্থী অংশ নেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা চলাকালে নিয়োগ বোর্ডে উপ¯ি'ত ছিলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি সামছুদ্দীন আল মাসুদ, ডিজির প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো: আলাউদ্দীন, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতাপ কুমার ঘোষ।
এদিকে মামলার বাদী শিক্ষক হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিজ্ঞ আদালত অবসমাননা করে এ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নিয়োগে ডিজি স্যারের প্রতিনিধি হিসেবে একজন সহকারি শিক্ষক বোর্ডে উপস্থিত থেকে প্রধান শিক্ষক প্রার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি একটি হাস্যকর ও বিরল ঘটনা। তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কোন ভুমিকা নেই। তারপরও তিনি বোর্ডে কেন উপস্থিত ছিলেন ? এসব প্রার্থীরা অবিলম্বে ২২ লাখ টাকার অর্থ বানিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতাপ কুমার ঘোষ সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সভাপতির সাথে কথা বলেন।
উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুদ্দীন আল মাসুদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি করে জানান, নিয়োগে কোন অনিয়ম হয়নি। নিয়োগ বোর্ডে তিনিসহ উপস্থিত ছিলেন, ডিজির প্রতিনিধি সাতক্ষীরা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: আলাউদ্দীন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতাপ কুমার ঘোষ। তবে সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দেন।
কলারোয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ বলেন, এ বিষয়ে জানতে আপনারা বিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেন। আমি বোর্ডে উপস্থিত ছিলাম মাত্র।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, নিয়োগ বোর্ডে আমি পরিদর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। আমি কমিটি বা অন্য কারোর প্রতিনিধি না। পরীক্ষা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা সেটা দেখার সেখানে ছিলাম। তিনি আরো বলেন, নিয়োগ বোর্ডে ডিসি স্যারের কোন প্রতিনিধি ছিলো না। এছাড়া সেখানে কোন কাগজে আমার স্বাক্ষর নেই।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমার জানামতে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সার্বক্ষনিক উপস্থিত থেকে নিয়োগ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। ইউএনও মহোদয়কে আমরা সন্মান করি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বক্তব্য, তিনি বোর্ডের কোন প্রতিনিধি না এবং কোন কাগছে স্বাক্ষর করেননি শুধু উপ¯ি'ত থেকে পর্যবেক্ষন করেছেন। এ বক্তেব্যের জবাবে তিনি বলেন, যদি তিনি উপস্থিত থেকে নিয়োগের বিষয়ে অস্বীকার করেন তবে এ নিয়োগ অবৈধ। এছাড়া সহকারি শিক্ষকের উপ¯ি'তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং এ বিষয়ে মাধ্যমিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
|