Home
 
কলারোয়ায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি
অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ

আজকের কলারোয়া - 23/04/2018
কলারোয়ায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কলারোয়া পৌর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সচেতন মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য উদ্যোগ হিসেবে দেশের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী প্রকল্প যাচ্ছেতাই ও দায়সারা ভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কলারোয়ায়। উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সুত্র জানায়- যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী প্রকল্পে কলারোয়ায় ২০১৭ সালে ১৫ অক্টোবর শেষ তারিখ ধার্য্য করে উপজেলার পৌর সদর ও ১২ ইউনিয়নের শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের আবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২ হাজার ১৫৪ জন আবেদন করেন। আবেদন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে দুই হাজার ৭৯ জনকে চুড়ান্ত করা হয় প্রশিক্ষণ ও অস্থায়ী পদায়নের জন্য। পরবর্তীতে যুব উন্নয়ন অফিস তাদেরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ওই কর্মসূচীর আওতায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে ঘোষনা দেয়। যা চলবে তিন মাস। প্রথম শিফটে ১ হাজার জনকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার দাশসহ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে মোট ৩২ জন কর্মকর্তাকে। তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়- ৩ ডিসেম্বর প্রথম শীপটে ১হাজার জনকে সকালে ৪টি ব্যাচ এবং বিকালে ৪টি ব্যাচ তৈরী করে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। যা চলে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। প্রতিটি ব্যাচে প্রত্যেক দিন ৪টি করে ক্লাসের রুটিন প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষনার্থীদের হাতে সরবরাহ করা হয়। সরবরাহকৃত ওই ক্লাস রুটিনেই ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। রুটিনে দেখা গেছে- যেসব কর্মকর্তারা নিয়মিত ক্লাস নিতে পারবেন তাদেরকে দিনে একটি বা কোনদিন দুটি ক্লাস দেয়া হয়েছে। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তাকে প্রত্যেক দিন কমবেশি ৫ থেকে ৬টি পর্যন্ত ক্লাস দেয়া হয়েছে। ফলশ্রতিতে ওই ক্লাসগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ক্লাস সময়ে প্রশিক্ষক না থাকায় খোশ গল্পে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী। কলারোয়ার এসি-ল্যান্ড বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি শুন্য থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন। আর সেখানেও রয়েছে গলদ। ইউএনও এবং এসি-ল্যান্ডের নামে সর্বাধিক সংখ্যক ক্লাস দেখানো হয়েছে রুটিনে। কিন্তু কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। নাম থাকলেও ক্লাস হয়নি সিংহভাগ দিনই। তথ্য অনুসন্ধ্যানে আরো জানা যায়- প্রথম শীপটে ৭৩ দিন প্রশিক্ষন চলাকালীন সময়ে রুটিন অনুযায়ী ৩৬৫টি ক্লাস নেয়ার কথা ইউএনও-এসি ল্যান্ডের। কিন্তু ইউএনও এবং এসি-ল্যান্ডের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মনিরা পারভীন ক্লাস নিয়েছেন মাত্র ১৬টি। অথচ ৩৬৫টি ক্লাসের বিপরীতে ক্লাস প্রতি ৪৫০টাকা হারে মোট ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ২৫০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, বরাদ্দ আসা সাপেক্ষে। ঠিক একই ভাবে রুটিনে দেখা যায়- উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা তার নিজ নামে ৫টি ও জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (এডি)’র নামে ৪ থেকে ৫টি ক্লাস। তবে তাদের ক্লাসগুলো সপ্তাহে একটি বা দুটির বেশী হয় না বলে জানিয়েছেন প্রশিক্ষণ নেয়া অনেকে। এদিকে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলার দায়িত্বে আছেন। তিনি সাতক্ষীরায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীতে প্রতিদিন প্রায় ৪টি ক্লাস দেখিয়েছেন আর কলারোয়াতে দেখিয়েছেন ৫টি ক্লাস। কিন্তু দেখা গেছে তিনি সপ্তাহে কলারোয়া আসেন ২ থেকে ৩ দিন। আসলেও দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ পান খুব কম। তবে সপ্তাহে তিনি ১/২টি ক্লাস নেন। এমনকি এডিও সঠিকভাবে ক্লাস নেন না। তবে তারা তিনজন-ই কিন্তু অন্য কারো দিয়ে ক্লাস গুলো করাতে পারতেন। এভাবে তথ্য অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে- প্রথম শীপটে ৭৩ দিনে তাদের দুই জনের ক্লাস নেয়ার কথা ছিল ৬৬৭টি। কিন্তু সেখানে তারা অধিকাংশ দিন ক্লাসে উপস্থিত হননি।। অথচ তাদের ৬৬৭ টি ক্লাস হিসেবে ক্লাস প্রতি ৪৫০ টাকা হারে মোট ২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪৫০ টাকা বরাদ্দ আসা সাপেক্ষে উত্তোলন করা হয়েছে। অনুসন্ধ্যানে অভিযোগ উঠেছে যে- প্রথম শীপটের প্রশিক্ষণ শেষে ১হাজার জনের মধ্যে ৮৯৯ জনকে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরে বন্টনের সময়ও ব্যাপক অর্থ বানিজ্য হয়েছে। এ ছাড়া এখনও পর্যন্ত ঘুষের বিনিময়ে এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে পরিবর্তন চলছে। যা প্রথম বন্টন তালিকা দেখলেও প্রমানিত হবে। ক্লাস সময়ে প্রশিক্ষক না থাকায় খোশ গল্পে কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী। এদিকে, ক্লাস সঠিকভাবে না হওয়ায় প্রশিক্ষনার্থীদের হাজিরা থাকে খুবই কম। কিন্তু যুব উন্নয়ন অফিস থেকে পরে ওই অনুপস্থিত প্রশিক্ষনার্থীদের মোবাইল করে ডেকে এনে অর্থের বিনিময়ে হাজিরা খাতায় হাজির দেখানো হয়েছে বলেও অনুসন্ধ্যানে উঠে এসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রশিক্ষণার্থী জানান- ‘১ম শিফটে তিনি উপস্থিত ছিলেন ৩০থেকে ৩৫দিনের মতো। তার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ৬৪দিন হাজিরা দেখিয়ে দিনপ্রতি ১’শ টাকা হারে ৬হাজার ৪’শ টাকা প্রদান করা হয়েছে, আর অফিসে দেখানো হয়েছে তার চেয়েও বেশিদিন। বাকি টাকাটা হয়তো তারাই নিয়েছেন।’ অপরদিকে ২য় শীপটে ঠিক একইভাবে অনিয়ম, দুর্নীতি চলছে। গত বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) পাইলট হাইস্কুলে প্রশিক্ষনরত দুটি ব্যাচে, এবং মডেল হাইস্কুলে একটি ব্যাচে দুপর সাড়ে ১২ টায় সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- কোন প্রশিক্ষক বা প্রশিক্ষনার্থী উপস্থিত নেই। খালি বেঞ্চ পড়ে আছে। বিকাল তিনটার সময় পাইলট হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়- কয়েকজন প্রশিনার্থী বসে আছেন কিন্তু প্রশিক্ষক নেই। একইভাবে গত রোববার (২২ এপ্রিল) পাইলট হাইস্কুল ও মডেল হাইস্কুলের একটি ব্যাচে সরেজমিনে গেলে নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক উপস্থিত কয়েক জন প্রশিক্ষনার্থী বলেন- তাদের কোন দিন ২টি আবার কোন দিন ৩ টি ক্লাস হয়। তবে ৪টি ক্লাস কোন দিন হয় না। এমনকি এই দিন রুটিন থাকা সত্বেও ইউএনও, এডি কোন ক্লাস নেননি। কেবল মাত্র যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ক্লাস নিয়েছেন একটি। অথচ তাদের তিন জনের ক্লাস ছিল ১৪টি। তারা আরো বলেন- গত রোববার পর্যন্ত তাদের দ্বিতীয় শীপটে ৫১ দিন ক্লাস চলছে। রুটিন অনুযায়ী ইউএনও-এসিল্যান্ড স্যারের ২৫৫টি ক্লাস নেয়ার কথা থাকলেও তিনি মাত্র একটি ক্লাস নিয়েছেন। আর ঠিক এভাবেই যুবউন্নয়ন কর্মকর্তাও ক্লাস না নিয়ে একইভাবে অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন। একজন প্রশিক্ষক বলেন- তাদের ক্লাস করার জন্য কোন উপকরণ দেয়া হয় না। এতো দুর্নীতি অনিয়মের মধ্যে একটি প্রকল্প চলতে পারে না। সচেতন মহল মনে করছেন- জননেত্রী শেখ হাসিনার এই প্রকল্পের অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া উচিত দুর্নীতিবাজদের। এমনকি ২য় শীপটের টাকা যাতে এভাবে উত্তোলন করতে না পারেন তার ব্যবস্থা করতে উদ্ধর্তন কর্মকর্তার সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন তারা। উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার দাশ এ কর্মসূচীতে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে স্বীকার করে বলেন- ‘তিনি যে দিন সময় পান সেদিন ক্লাস নেন। আর সময় না পেলে আমার সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ক্লাস নেন। অর্থ বানিজ্যের বিষয়টি সঠিক নয়।’ প্রথম শীপটের ৭৩ দিনের টাকা উত্তোলনের প্রশ্নে তিনি বলেন- ‘বরাদ্দ অনুযায়ী সকল প্রশিক্ষককে টাকা দেয়া হয়েছে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন জানান- ‘আমার ক্লাস নেয়ার কথা না। আমার মটিভিশন করা কথা। তাছাড়া আমি যখন সুযোগ পাচ্ছি তখন ক্লাসে যাচ্ছি। আমার ক্লাস মিস হয়না, কেউ না কেউ করেন, আমি কোন টাকা উত্তোলন করেনি। এখনও আমাদের টাকা আসেনি।’ মটিভিশনের কথা থাকলেও ক্লাস রুটিনে নাম থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন- ‘আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।’ এ বাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন- ‘আমার বক্তব্য এটা সুস্পষ্ট একটি অপরাধ। এই অপরাধ বরদাস্ত করা হবে না। আপনি আমাকে জানালেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’


 



গন্তব্য কলারোয়া    
Product Image Product Image


 
    
Copyright : Kalaroa.com, 2019
Email : info@kalaroa.com